মূল রচনা থেকে অংশ:

আমার ছেলেবেলা মোটেই মজার নয়। গল্প করে বেড়াবার কিছু নেই। সব মনেওনেই__তবু বলছি।আমি বড় হয়েছি পুরোনো ঢাকায়। অনেকের ধারণা নেই যে, পুরোনো ঢাকায় অসম্ভববসতবান বেশকিছু মানুষ থাকেন। বাইতে থেকে তদের অর্থ ও বিভবের পরিমাণ বোঝা যারনা। আমাদের একেবারেই বোঝা যেত না। জেলখানার মতো উচু দেয়াল দেওয়া বাড়ি।গেটের ভেতর দিরে ঢুকলে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা । ফুলের বাগানটাগান নেই।এলোমেলোভাবে কয়েকটা বড় বড় দেশী ফুলের গাছ। টাপা গাছ, শিউলি গাছ, বাড়ির দক্ষিণদিকে হাসনাহেনার প্রায় জঙ্গলের মতো ঝাড়। এই গাছগ্তলোতে কখনো ফুল ফোটে না।মাঝে মাঝে কেটে দেওয়া হয়। আবার আপনাতেই গজায়। বাড়ির পেছনে বেশকিছু ফলেরগাছ। একটা আছে কামরাঙা গাছ। এই গাছে কিছু কামরাঙা হয়। অন্যগুলোতে ফল হয়না। | একটা পাতকুয়া আছে। মেঝে বাধানো | কুয়ার পানি খুব পরিষ্কার তবে বিশ্রী গন্ধ বলেসেই পানি ব্যবহার করা হয় না। বাড়িটা একতলা অনেক বড়। মূল বাড়ির উত্তরে কামরাউ।গাছের কাছে চার কামরার আলাদা একটা দোতলা বাড়ি। নিচে তিন কামরা, উপরে এককামরা । দোতলাটাকে আমরা বলতাম_ উত্তর বাড়ি। দোতলার পুরোটাই বলতে গেলেবারান্দা। ছেলেবেলায় আমার উত্তর বাড়িতে যাওয়া পুরোপুরি নিষেধ ছিল। কারণ উত্তরবাড়িতে থাকতেন বাবা। তিনি বাচ্চাকাচ্চা পছন্দ করতেন না। আমার বাবা পৃথিবীরবেশিরভাগ জিনিনই অপছন্দ করতেন। হইচই অপছন্দ করতেন, বাচ্চাকাচ্চা অপছন্দ করতেন,গান অপছন্দ করতেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল গাড়ি অপছন্দ করতেন কারণ গাড়ি স্টার্টকরলে তটভট শব্দ হয়। যে কারণে আমাদের কোনো গাড়ি ছিল না। আমি স্কুলে যেতামবিকশায়। আমাকে মাথা কামানো গান্টাগোট্টা একটা লোক স্কুলে নিয়ে যেত। তার নাম ছিলসর্দার। আখি ডাকতাম সর্দার চাচা। তিনি কথায় কথায় বলতেন_এক টান দিয়া কইলজাছিড়্যা বাইর কইরা ফেলামু। এমনভাবে বলতেন যেন তিনি কাজটা এক্ষুনি করবেন।ধরুন, আমরা রিকশা করে যাচ্ছি। অন্য একটা রিকশার সঙ্গে ধাকা লাগল। আমারপড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। তিনি চলন্ত রিকশায় উঠে দাড়িয়ে বলতেন__এক টান দিয়াকইলজা| ছিড্যা ফেলামু।সর্দার চাচাকে আমি খুবই পছন্দ করতাম। কিন্তু উনি আমাকে পছন্দ করতেন কিকরতেন না কোনোদিন জানতে পারি নি। সঙ্গার চাচাকে আমার অপছন্দ করার কোনোকারণ ছিল না। পছন্দ করতাম, কারণ আমার আর কেউ ছিল না। বাবার সঙ্গে আমারকোনো রকম যোগাযোগ নেই। মা'র সঙ্গেও নেই। বাবা মাকে পরিত্যাগ করেছিলেন।মা'র এই বাড়িতে আসা নিষেধ ছিল।আমাকে লালনপালন, স্কুলে নিয়ে যাওয়া, স্কুল থেকে আনা সবই সর্দার চাচা"রূতেন। আমার জগৎ ছিল স্কুল এবং স্কুলের চার দেয়ালঘেরা আমাদের বাড়ি। স্কুলখামার ভালো লাগত না । বাড়িও ভালো লাগত ম|। আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখনঢলে যাওয়া আমার বন্ধ হয়ে গেল। কারণ আমার কাছে স্পষ্ট নয়। শুধু শুনলাম__বাবালে দিয়েছেন, স্কুলে যেতে হবে না। মাস্টার এসে আমাকে বাড়িতে পড়াবে। আমার7. যেতে না দেওয়ার কারণ আমি তখন যা অনুমান করেছি তা হুচ্ছে__কোনো একদিনতো স্কুল থেকে আমার মা আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। "৫